[ad_1]
রুমির কথায় আমি খানিকটা স্বস্তিই খোঁজে পেলাম। অপরূপ বুদ্ধিমতী একটি মেয়ে বলেই মনে হলো। আর যার কারনে, আমার হৃদয়ের কুঠরে আরো শক্ত করেই জায়গা করে নিলো। আমি বললাম, টাকা পয়সা খরচ করে হোটেলে থাকতে যাবে কেনো? আমাদের বাড়ীতে তো তেমন কেউ নেই। বাবা আর ছোট বোনই শুধু। বিশাল পুরু বাড়ীই খালি। সমুদ্রের খুব কাছাকাছি। তুমি চাইলে আমাদের বাড়ীতেই থাকতে পারো।
রুমি গাছটার সাথে মাথা ঠেকিয়ে মন খারাপ করেই বললো, আপত্তি থাকতো না। কিন্তু আমাকে যে যেতে হবে হবু স্বামীর সাথে? কোন অধিকারে তোমাদের বাড়ীতে থাকবো?
আমি বললাম, হবু স্বামীর সাথে যেতে হবে কেনো? আমার সাথে গেলে আপত্তি কি?
রুমি ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললো। বললো, তোমার সাথেই বা কোন অধিকারে যাবো?
আমি খুব সাহসী হয়েই বললাম, ভালোবাসার অধিকারে।
রুমি গাছটার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো, ভালোবাসা? ওসব আমার কাছে স্বপ্ন! এতদূর সমুদ্র দেখতে যাবো, বাবা মাকে ম্যানেজ করার একটাই পথ, হবু স্বামীকে কোন রকমে বুঝিয়ে আমাকে সংগে করে নিয়ে যাওয়া।
আমি বললাম, তোমাকে কিন্তু খুব আধুনিকা মনে করেছিলাম। তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তুমি খুবই ভীতু।
রুমি বললো, সত্যিই বলেছো খোকা। আমি খুবই ভীতু। ভীতু না হলে কি, বাবা মায়ের গড়া সাজানো জীবন আমাকে বেছে নিতে হতো? জানা নেই শুনা নেই, সাজানো নাটক এর মতোই ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে না হতেই, বাবার টাকার শক্তির ইশারায় ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা সমাপ্ত একটি ছেলে আমাকে স্বেচ্ছায় প্রেম নিবেদন করে, বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে পারতো? তুমি আমার কষ্ট বুঝবে না খোকা?
এই বলে রুমি ভেতর বাড়ীর দিকেই পালালো।
মানুষ কেমন করে বদলায়, তা আমারও জানা নেই। রুমি হঠাৎ করেই বদলে গিয়েছিলো। সেদিন ইউনিভার্সিটিতে এলো। ক্লাশ করার উদ্দেশ্যে নয়, আমার সাথে দেখা করার জন্যেই। ইলেক্ট্রিক্যাল ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় রুমিকে পাগল এর মতো ছুটাছুটি করতে দেখে আমি নিজেই এগিয়ে গেলাম। বললাম, কাকে খোঁজছো রুমি?
রুমি হঠাৎই যেনো ভাষাহীন হয়ে গেলো। আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকলো পলকহীন চোখে। তারপর আহলাদী গলায় বললো, আমি সমুদ্র দেখতে যাবো। আজকেই যাবো। এখুনিই যাবো। আমাকে নিয়ে যাবে না?
আমি বললাম, আমার ক্লাশ আছে যে?
রুমি বললো, একটা ক্লাশ এর কত দাম? আমি দাম দিয়ে দেবো।
আমি বললাম, ক্লাশ এর কি কোন দাম থাকে? বুঝতে পারছি, তোমার মাথাটা ঠিক নেই। চলো।
আমি রুমির হাতটা ধরে এগিয়ে চললাম রাজপথে। অতঃপর দূরপাল্লার বাস স্ট্যাণ্ডে। রওনা হলাম নিজ বাড়ীর পথে।
পাহাড়ী বুনো পরিবেশ। রুমি ওসব দেখে দেখে শুধু চঞ্চলই হতে থাকলো। আমাকেই দেখাতে থাকলো, খোকা, দেখো, দেখো, কি সুন্দর!
রুমি আমাদের বাড়ীতেই থাকলো। রাতারাতি আমার ছোট বোন ইলার সাথেও ভাব জমিয়ে ফেললো। পরদিন বেলা করে ঘুম থেকে উঠে,ঘরে কাউকে ন দেখে উঠানেই পা দিলাম। দেখলাম, গাছের ডালে বসা, ইলা আর রুমি। আমি ডাকলাম, গাছের ডালে বসে কি করছো?
ইলাই উত্তর দিলো, রুমি আপু গাছে উঠতে চাইলো, আমি উঠতে শিখিয়েছি। টেবিলে নাস্তা দেয়া আছে। ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নিও। আমাদের ক্ষুধা লেগেছিলো, আমরা খেয়ে নিয়েছি। তাই না রুমি আপু?
কতদিন পর আমার অতি আদরের ছোট বোন ইলার সাথে দেখা। অথচ, আমি ইলার দিকে না তাঁকিয়ে রুমির দিকেই তাঁকিয়ে থাকলাম। ভরা যৌবন রুমির দেহে। অপরূপ ঠোট, আভিজাত্যময় চেহারা মনটাকে উদাস করে। আমি রুমির উপর মিছেমিছি রাগ করেই বললাম, একসংগে এলাম, অথচ আমাকে ফেলে নাস্তা করে ফেললে?
রুমি ইলার দিকে তাঁকিয়ে বললো, কেউ যদি দেরী করে ঘুম থেকে উঠে, তাকে ফেলে না খেয়ে ক্ষুধায় মরবো নাকি ইলা?
তারপর, খিল খিল করে হাসতে থাকলো।
ইলাও সুর মিলিয়ে বললো, ঠিকই তো! আমরা ক্ষুধায় মরবো নাকি?
আমার ইলার উপরই রাগ হলো। ইলাকে লক্ষ্য করেই বললাম, ঠিক আছে, তাহলে আমিও বলে রাখলাম, আজ রাতে আমার সাথে ঘুমাতে পারবে না। তুমি একা একা ঘুমাবে। আমি বড় আপুর ঘরে গিয়ে ঘুমাবো।
ইলা কিছু বলার আগেই রুমি ইলার পক্ষ হয়ে ঠিক ইলার কন্ঠ নকল করে বলতে থাকলো, না ঘুমালে নাই। তুমি কি ছোট খোকা? আমি কি তোমার কোল বালিশ? কোল বালিশ চাইলে অনেক কোলা বালিশ আছে। খোঁজে নিলেই পারো। এখন নাস্তা করে এসো। আমরা সমুদ্র দেখতে যাবো।
তারপর খিল খিল করে হাসতে থাকলো। সাথে সাথে ইলাও খিল খিল করে হাসতে থাকলো, তার মিষ্টি গেঁজো দাঁতে।
আমার মেজাজাটাই শুধু খারাপ হতে থাকলো। ওরা কি পেয়েছে আমাকে? এতদিন পর বাড়ী ফিরে এলাম। ভেবেছিলাম, ইলার মিষ্টি দাঁতে চিবুনো নাস্তাটাই মজা করে খাবো। ওই পাগলী ধরনের মেয়েটা তো সবই ভণ্ডুল করে দিচ্ছে। আর রুমিরও যে কি ঠোট! ইলার ঠোট নকল করে যেমন করে কথা বলছে, ইচ্ছে করছে ওর মুখ থেকেই নাস্তাটা সারি। আমিও নাছোড়বান্দার মতো বললাম, তুমি খাইয়ে না দিলে, আমি খাবো না।
রুমি আমার দিকে চঞ্চল চোখেই তাঁকালো। গাছ থেকে লাফ দিয়ে নামার উদ্যোগ করে বললো, তোমার নাম খোকা জানতাম। সবার মন জয় করে নিতে পারো, তাও অনুমান করেছি। কিন্তু এখন তো দেখছি, তুমি সত্যিই এক কচি খোকা!
এই বলে লাফিয়ে নামলো গাছটার উপর থেকে। তারপর বললো, কেউ খাইয়ে না দিলে বুঝি খাওনা?
আমি বললাম, ওসব তুমি বুঝবে না। ইলা আমার খুব আদরের ছোট বোন। আমি বাড়ী ফিরে এলে, ইলা কখনোই আমাকে ফেলে খায়না।
রুমি বললো, আজও খেতে চাইনি। এবং এখনো খায়নি। তাই আমিও খাইনি। আচ্ছা, তুমি এমন কেনো? এতই যদি জানো, ইলা তোমাকে ফেলে খায় না, তাহলে এত দেরী করে ঘুম থেকে উঠলে কেনো?
আমি বললাম, স্যরি, সারা রাত ভালো ঘুম হয়নি। ঘুমটা এসেছিলো ঠিক ভোর রাতের দিকেই।
রুমি বললো, হয়েছে! ক্ষুধায় পেট চোঁ চোঁ করছে। আর অপেক্ষা করে থাকতে পারছি না।
ইলাও গাছের উপর থেকে লাফিয়ে নামলো। আহলাদী গলায় বললো, তুমি কি বিশ্বাস করেছিলে, সত্যি সত্যিই তোমাকে ফেলে নাস্তা করে ফেলেছিলাম?
আমি আবেগ আপ্লুত হয়েই ইলার মিষ্টি ঠোটে চুমু দিয়ে বললাম, না ইলা, তারপরও?
ইলার ঠোটে চুমু দিতে দেখায় রুমি কেমন যেনো তীক্ষ্ম চোখেই আমার দিকে তাঁকিয়ে থাকলো। আমি পাত্তা দিলাম না। ইলার সাথে আমার সম্পর্কই আলাদা। সেখানে কেউ এসে ভাগ বসাক, তা আমি কখনোই চাই না। এমন কি রুমি চাইলেও না। ইলা আমার অতি আদরের ছোট বোন।
[ad_2]